বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫৩.৭ কোটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর তথ্যমতে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা হবে ৬৪ কোটি এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে পৌঁছাবে ৭৮ কোটিতে। অথচ ডায়াবেটিস মহামারীর রূপ নিলেও, অধিকাংশ মানুষ এখনও ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায় জানে না।
বাস্তবতা হলো, ৯৫% এর বেশি ডায়াবেটিস রোগী টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং এই বিশাল সংখ্যক মানুষ দিনের পর দিন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত। কিন্তু অনেকেই জানেন না, টাইপ–২ ডায়াবেটিস শুধু নিয়ন্ত্রণযোগ্যই নয় বরং সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য।
ডায়াবেটিসে রোগে ভুগান্তির কারণ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় বলতে আমরা বুঝি- সকালে হাঁটা, ভাতের বদলে রুটি খাওয়া আর মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়া। এসব ধারণা আমাদের ভেতরে আপনা-আপনি আসেনি। দিনের পর দিন ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা করা বড় বড় ডাক্তারদের পরামর্শ এবং প্রচারণার মাধ্যমেই এসব ধারণা আমাদের মনে গেঁথে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এই সকল নিয়ম অনুসরণ করেও ডায়াবেটিস রোগীরা তেমন কোনো সুফল পায় না। বরং দিনে দিনে ডায়াবেটিস আরও জটিল আকার ধারণ করে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগ শরীরে দেখা দিতে শুরু করে।
এছাড়া, ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসার জন্য যেসব ওষুধ দেওয়া হয়, সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দিনে দিনে ঘনিভূত হতে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী দীর্ঘদিন ওষুধ সেবনের ফলে তার প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং সে টাইপ-২ থেকে টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীতে পরিণত হয়।
অথচ এতোসব ভয়ঙ্কর পরিনতী দেখার পরও ডাক্তাররা কখনো বলেনা যে ডায়াবেটিস শুধু নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়- বরং এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তির উপায়ও আছে। সাধারণ মানুষও ডাক্তারের চেয়ে বেশি জানতে আগ্রহী নয়, আর মানুষের জন্য উন্মুক্ত ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে কেউ প্রকৃত অর্থে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সঠিক পথ কিংবা ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির উপায় জানতে পারে না।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায়
মূলত টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয় আমাদের লাইফস্টাইল ঘটিত কয়েকটি কারণে। এর মধ্যে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত বা বারবার খাওয়ার অভ্যাস, পরিশ্রম না করা, পর্যাপ্ত ও সময়মতো না ঘুমানো এবং মানসিক চাপ বা স্ট্রেস। এই অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলের খারাপ অভ্যাসগুলোই আমাদেরকে দিনে দিনে ডায়াবেটিস রোগীতে পরিণত করে।
এইসব কারণেই আমাদের কোষে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি হয়। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে গ্লুকোজ সহজে কোষে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে শরীর অতিরিক্ত ইনসুলিন উৎপাদন করে গ্লুকোজকে কোষে ঢোকাতে চেষ্টা করে। এই অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজ ও ইনসুলিন- উভয়ের মাত্রাই বেড়ে যায়। এই পর্যায়কেই বলা হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
এখন বিষয়টি অনেকটা সহজভাবে বোঝা গেল- যদি আপনি সত্যিই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাহলে আপনাকে এর মূল কারণগুলোকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে:
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ
- অতিরিক্ত বা বারবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ
- পরিশ্রম বা কায়িক শ্রম বাড়ানো
- সময়মতো ও পর্যাপ্ত ঘুম
- মানসিক চাপ কমানো
আর আপনি যদি ডায়াবেটিস থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে চান- অর্থাৎ শরীর থেকে ডায়াবেটিস দূর করে সুস্থ থাকতে চান- তাহলে আপনাকে অবশ্যই:
- স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে
- অতিরিক্ত খাওয়া বন্ধ করে রোজা বা ফাস্টিং করতে হবে
- নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম বা জিম করতে হবে
- সময়মতো ও গভীর ঘুম নিশ্চিত করতে হবে
- মানসিকভাবে শান্ত ও চাপমুক্ত থাকতে হবে
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস মুক্তি সম্ভব
জীবনযাপনের এই পরিবর্তনগুলো কি ডায়াবেটিস মুক্তির জন্য যথেষ্ট?
আপনার মনে যদি এমন প্রশ্ন জাগে, তাহলে নিশ্চিত থাকুন-আপনি সঠিক পদ্ধতিতে, সঠিক লাইফস্টাইল অর্থাৎ জেকে লাইফস্টাইল অনুসরণ করেন, তাহলে আপনার শরীর ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থেকে মুক্ত হবে।
অর্থাৎ আপনার কোষ “খালি” হবে, আর কোষ খালি হলে- ফলে আপনার খাবার খাওয়ার পরে রক্তের গ্লুকোজ (সুগার) সহজেই কোষে পৌঁছাবে। তখন স্বাভাবিকভাবেই রক্তে সুগার ও ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকবে না। এর ফলেই আপনি টাইপ-২ ডায়াবেটিস থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে পারেন।
আরও জেনে রাখুন, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে শুধু ডায়াবেটিসই হয় না- এর পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, ফ্যাটি লিভার, হৃদরোগ, IBS, PCOS সহ অসংখ্য রোগও দেখা দেয়। এবং আপনি খুব সহজেই এই সব রোগ থেকেও মুক্তি পেতে পারেন- যদি আপনার শরীর ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স মুক্ত হয়।
https://